উমরাহ পালনকারীর প্রথম কর্তব্য হচ্ছে , উমরাহ এর সঠিক নিয়ম কানুন ( Umrah guide ) ভালো ভাবে শিখে নেওয়া । একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ উমরাহের নিয়ত করতে হবে । এই উমরাহ , আল্লাহ্পাক এর পক্ষ থেকে একটি দয়া, যার মাধ্যমে আমরা নিষ্পাপ হইতে পারি , আমরা পবিত্র হইতে পারি , আমাদের নেকীর পাল্লা ভারী করতে পারি , তাই রাব্বুল আলামিনকে খুশি করার নিয়তে আমাদের উমরাহ করতে হবে। সঠিক ভাবে উমরাহ পালনের জন্য, এই Umrah guide এ সবকিছু সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

উমরার ফরজ দুটি।
(এগুলো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ছুটে গেলে উমরা বাতিল হয়ে যাবে।)

1. ইহরাম :
ইহরাম বাঁধা। ইহরাম পুরুষরা সেলাইবিহীন দুটি কাপড় পরিধান করবে। আর নারীরা ঢিলেঢালা স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করবে।মিকাত থেকে বা মিকাতের বাইরে থেকে পবিত্রতা অর্জন করে উমরার নিয়তে ইহরামের কাপড় পরিধান করে তালবিয়া পাঠ করা; সম্ভব হলে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেওয়া।
তালবিয়া হলো
لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ , لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ , اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ , لاَ شَرِيْكَ لَكَ
’লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত, আমি হাজির, তোমার কোনো অংশীদার নেই, তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিয়ামতের সামগ্রী সবই তোমার, (সর্বযুগে ও সর্বত্র) তোমারই রাজত্ব, তোমার কোনো অংশীদার নেই।
ইহরামের নিয়ত করার কারণে কিছু কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায় সেগুলো হলোঃ
(১) সেলাই করে প্রস্তুতকৃত পোষাক পরা (পুরুষদের জন্য)। (২) মাথার সাথে লেগে থাকে এমন জিনিস দ্বারা মাথা ঢাকা। (৩) ইচ্ছাকৃত ভাবে মাথার চুল ও শরীরের পশম কাটা বা উঠান। (৪) হাত পায়ের নখ কাটা। (৫) আতর বা সুগন্ধি জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা। (৬) স্থলচর প্রাণী শিকার করা। (৭) স্বামী-স্ত্রী মিলন করা বা এ জাতীয় বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা। (৮) বিবাহের প্রস্তাব দেয়া বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। (৯) মহিলাদের জন্য হাত মোজা ব্যবহার, মুখ ঢাকা (তবে লোকজনের সামনে অবশ্যই মুখ ঢাকতে হবে)। (১০) মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানার গাছ গাছালী কাটা, ভাঙ্গা, উপড়ান (সর্বাস্থায়)। (১১) মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানায় পরে থাকা জিনিস নেয়া (তবে তা মালিককে দেয়ার জন্য উঠান যাবে)।

2. তাওয়াফ:
বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা। মক্কায় পৌঁছে কালবিলম্ব না করে পবিত্রতা অর্জন করে তাওয়াফ করতে হবে। পুরুষরা তাওয়াফের সময় ইজতেবা তথা ডান কাঁধ খালি করে রাখবে। অর্থাৎ চাদরের মধ্যভাগ ডান কাঁধের নিচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের ওপর রাখতে হবে। হাজরে আসওয়াদ বরাবর জায়গা থেকে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। তাওয়াফের সময় সম্ভব হলে রুকনে ইয়ামানী হাত দ্বারা স্পর্শ করবে এবং প্রতিবার চক্করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছলে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দ্বারা ইশারা করে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে পরবর্তী প্রদক্ষিণ শুরু করবে। তাওয়াফ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াতসহ যেকোনো দোয়া পাঠ করা যায়।
এভাবে সাত চক্কর শেষ হলে উভয় কাঁধ ঢেকে নেবে এবং মাকামে ইবরাহীমের বরাবর পিছনে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। তবে কখনও ভিড়ের কারণে সেখানে নামাজ পড়া সম্ভব না হলে মাসজিদুল হারামের যেকোনো স্থানে পড়লে আদায় হয়ে যাবে।
উমরার ওয়াজিবও দুটি
(এগুলো ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে উমরা বাতিল হবে। আর অনিচ্ছাকৃত ছুটে গেলে উমরা আদায় হয়ে যাবে; তবে শর্ত হলো এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে দম বা কোরবানি দিতে হবে।)

1. সাঈ :
সাফা-মারওয়া সাঈ করা। সফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করতে হবে। প্রথমে সফা পাহাড়ে আরোহণ করে কোরআনের এই আয়াতটি পাঠ করবে, ‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শায়া ইরিল্লাহ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)। অতঃপর কিবলামুখি হয়ে দুই হাত তুলে মহান স্রষ্টার দরবারে প্রার্থনা করবে; কেননা এটা দোয়া কবুলের বিশেষ স্থান। এরপর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদির’ বলে সাঈ শুরু করবে। সাঈ অবস্থায় যেকোনো দোয়া পাঠ করা যায়; তবে সবুজ বাতি জ্বালানো স্থানটি পুরুষরা একটু দ্রুত অতিক্রম করতে হবে (মহিলারা স্বাভাবিকভাবে অতিক্রম করবে) এবং স্থানটি অতিক্রমকালে উভয়ে এই দোয়া পড়বেÑ রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ’আজ্জুল আকরাম। অতঃপর মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে সাফা পাহাড়ের অনুরূপ দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করবে। এভাবে মোট সাতবার প্রদক্ষিণ করবে এবং মারওয়া পাহাড়ে এসে সাঈ শেষ হবে।

2.মাথা মুণ্ডানো:
পুরুষদের মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটতে হবে। আর মহিলাদের চুলের অগ্রভাগ থেকে কমপক্ষে এক কুর পরিমাণ কাটতে হবে। আর এরই মাধ্যমে উমরার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। প্রত্যেক খোদাপ্রেমিক মুমিন বান্দাই মক্কা ও মদিনা জিয়ারতের স্বপ্ন লালন করে। সর্বদা তৃষ্ণার্ত থাকে জিয়ারতের পিপাসায়। প্রকৃত প্রেমিক বান্দা কখনও বাইতুল্লাহ ও মদিনার জিয়ারতে তৃপ্ত হয় না। বরং প্রতিবার জিয়ারতে পিপাসা আরও প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ফিরে এসে প্রতিটি মুহূর্তে সে দগ্ধ হতে থাকে মক্কা ও মদিনার বিরহ বেদনায়।
তাই মহান প্রভুর দরবারে আমাদের এই মিনতি, হে আল্লাহ! আপনার সব প্রেমিক বান্দাদের দয়ার চাদরে আবৃত করে হজ ও উমরার মাধ্যমে বারবারবাইতুল্লাহ ও মদিনার জিয়ারতের তাওফিক দান করুন।

উমরার ফজিলত
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ: أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم قَالَ: «العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالحَجُّ المَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلا الجَنَّةُ». متفق عليه.
১) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,এক উমরাহ অন্য উমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সবকিছুর কাফফারা। আর মাবরুর হজের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। ( বুখারী ও মুসলিম )
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُما قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «تَابعُوا بَيْنَ الحَـجِّ وَالعُمْرَةِ فَإِنَّـهُـمَا يَــنْــفــِيَــانِ الــفَــقْــرَ وَالــذنــُوبَ كَمَا يــَنْــفِــي الــكِــيــرُ خــَبــَث الــحَــدِيــدِ». أخرجه النسائي.
২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ তোমরা বার বার হজ্জ ও উমরাহ আদায় কর, কেননা এ দুটো দরিদ্রতা ও গুনাহকে সে ভাবে মুছে ফেলে, যে ভাবে কর্মকারের হাওয়া দেয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে থাকে। (নাসায়ী- হাদীস সহীহ)
রমজানে ওমরা করলে হজ করার সওয়াব
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এ সেই রমজান, যে মাসে মানবের হেদায়েতের জন্য কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
এ মাসের সিয়ামকে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। হজরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার ওপর আল্লাহ কী কী রোজা ফরজ করেছেন, তা আমাকে বলে দিন। উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজানের রোজা।’ লোকটি বলল, এছাড়া অন্য কিছু কি আমার কর্তব্য আছে? তিনি বললেন, না, তবে যদি তুমি নফল রোজা রাখ, তা হলে ভিন্ন কথা।’ (বোখারি : ১৮৯১)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য এ মাসের সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। (নাসাঈ)।
ফলে ফরজ সিয়াম রমজানে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা আরও বেড়ে গেছে।
এ মাস এলে রাসুলে করিম (সা.) অতিশয় আনন্দিত হয়ে সাহাবাদের সুসংবাদ দিয়ে বলতেন, তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। (নাসাঈ)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, রমজানে সিয়াম পালন করল, তার জন্য আল্লাহর হুকুম হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া। (বোখারি)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজানে প্রত্যেক মোমিন মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। (বাযযার, সহি আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব : ৯৮৮, মুসনাদে আহমাদ : ৭৪৫০)। এ মাসের প্রতি রাত ও দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু মানুষকে দোজখ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, মুসনাদে আহমাদ : ৭৪৫০)।
এ মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়। যেমন- হাদিসে এসেছে, রমজানে ওমরা করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজানে ওমরা করা আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সব ইবাদত-বন্দেগিসহ সব সৎ কাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেড়ে যায়
এ মাসে আমলের মাধ্যমে অনেক বেশি মুনাফা লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক আনসারি মহিলাকে বললেন, তুমি কেন আমাদের সঙ্গে হজ করতে যাওনি? তিনি বললেন, আমাদের পানি বহনকারী দুটি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও তার ছেলে হজ করতে গিয়েছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তিনি বলেন, রমজান এলে তুমি ওমরা করবে। কেননা এ মাসের ওমরা একটি হজের তুল্য। সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, রমজানে ওমরা একটি হজের তুল্য। (বোখারি : ১৭৮২, মুসলিম : ১২৫৬, মুসনাদে আহমাদ : ২০২৫)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, উম্মে মাকিল (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো হজ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমার উটটি দুর্বল। তিনি বললেন, তুমি রমজানে ওমরা করো। কেননা রমজানে ওমরা (সওয়াব হিসেবে) হজের তুল্য। (মুসনাদে আহমাদ : ২৭২৮৫)। হে আল্লাহ আমাদের রমজানে ওমরা করার তৌফিক দান করুন।

ইহরাম অবস্থায় যা করা বৈধ
1. শুধু পানি বা সুগন্ধ বিহীন সাবান দিয়ে মাথা ও শরীর ধোয়া যাবে ।
2. ক্ষত স্থানে বেন্ডেজ লাগানো যাবে ।
3. চশমা , ঘড়ি , বেল্ট, সেফটিপিন , ইয়ারফোন ব্যবহার করা যাবে ।
4. সেন্ডেল, আংটি পড়া যাবে ।
5. মাথায় ছাতা ব্যবহার করা যাবে ।
6. ইহরামের পোশাক পরিবর্তন এবং পরিষ্কার করা যাবে ।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ
• চুল, নখ কাটা
• কাপড়ে বা শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা
• ইহরামের কাপড় মাথায় লেগে থাকে এমন কিছু পড়া , যেমন টুপি, পাগড়ি , ইত্যাদি
• ইহরাম অবস্থায় পুরু শরীরে বা আংশিক ভাবে সেলাই করা কাপড় পরিধান করা
• স্বামী-স্ত্রী শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো বা এ সংক্রান্ত কিছু করা
• বিয়ের প্রস্তাব দেয়া ( মুহরিম অবস্থায় বিয়ে করা যাবে না ).
• Ihram অবস্থায় মহিলারা হাতমোজা পরবেনা, নেকাব দিয়া চেহারা ঢাকবে না । মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষ থেকে পর্দা করার জন্য ওড়না জাতীয় কিছু ব্যবহার করবে ।
• কোনো প্রাণী শিকারের উদ্দেশে ধাওয়া করা / শিকার করা
• হারাম এরিয়াতে গাছের পাতা / ডাল ভাঙা ।

How to Make your Ihram

ইহরাম (Ihram) আরবি শব্দ ,  যার অর্থ নিষিদ্ধ বা হারাম । অর্থাৎ কোনো জিনিষকে নিজের ওপর নিষিদ্ধ বা হারাম করে নেওয়া । নামাজে যেমন নিয়ত করতে হয়, তেমনি হজ বা উমরাহ করার জন্য ইহরাম বাঁধতে হয়, এই ইহরাম ই  হলো হজ বা ওমরার নিয়ত ।  ইহরাম অবস্থায় দুনিয়াবী অনেক হালাল কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায় ।

ইহরামের ওয়াজিব তিনটি

  1. সেলাই বিহীন কাপড় পরা ( পুরুষ ) ।
  2. মীকাত থেকে ইহরাম বাধা ।
  3. ইহরাম বাধার পরে অর্থাৎ নিয়ত করার পরে তালবিয়া পাঠ করা ওয়াজিব।

মীক্বাত কি ?  

হজ বা উমরাহ এর উদ্দেশ্যে যে নির্ধারিত স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে হয় , ওই স্থানকে মীক্বাত বলে ।

হজ বা উমরাহ এর স্থানগত মীকাত ৫ টি
১. জুলহুলাইফাহ
২. আল জুহফা
৩.কারনুল মানাযিল
৪. ইয়ালামলাম
৫. জাতুইরক

বাংলাদেশ এর হজ / উমরাহ যাত্রীগণ “ইয়ালামলাম ” থেকে ইহরাম বাধবে / নিয়ত করবে , বাসা বা ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে ইহরাম এর কাপড় পরিধান করবে কিন্তু ইহরাম বাধবে মীকাত থেকে । বিমান এর ভিতরে মীকাত পয়সানোর ৩০মিন পূর্বে ইহরাম বাধার ঘোষণা দেওয়া হয় । তখন সবাই ইহরাম বাধবে অর্থাৎ নিয়ত করবে । ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করা যাবে না । ইহরাম এর কাপড় পরা, ইহরাম বাধা এক নয়।
বাংলাদেশের হজ-উমরাহ যাত্রীগণ তাদের বাসা বা ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে ও ইহরাম বাঁধতে পারে ,
তবে মীকাত থেকে বা পূর্বক্ষণে ইহরাম বাধা উচিৎ । কারণ নবীজি রাসূলুল্লাহ সাল্লেল্লাহু ওয়ালিহিসালাম মীকাতে পৌঁছে ইহরাম করতেন । তাই মীকাত এ না পৌঁছে ইহরাম করবে না এবং তালবিয়া ও পাঠ করবে না ।

ইহরাম এর ধাপ সমূহ  

  1. ইহরাম এর প্রস্তুতি
  2. কাপড় পরা
  3. নিয়ত করা
  4. তালবিয়া পাঠ করা
  5. ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ থেকে দূরে থাকা।
  1.  ইহরাম এর প্রস্তুতি 
  • হাত এবং পায়ের নখ কাটা ।
  • শরীরের অবাঞ্চিত লোম / চুল পরিষ্কার করা ।
  • গোসল বা ওযু করে পবিত্রতা অর্জন করা ।
  • ইহরাম করার পূর্বে গোসল করাই উত্তম , যদি পর্যাপ্ত পানি না থেকে বা অন্য কোনো বাস্তব অসুবিধা থাকে তবে ওযু করে ইহরাম এর পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে।
  1. ইহরাম এর কাপড় পরা
    পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন ২ টুকরা সাদা কাপড় , একটি নীচে পরবে। দ্বিতীয়টি গায়ে দিবে। ৩য় আর কোন প্রকার কাপড় গায়ে রাখা যাবে না। যেমন টুপি, গেঞ্জি, জাইঙ্গা বা তাবীজ কিছুই না। তবে শীত নিবারণের জন্য চাদর ও কম্বল ব্যবহার করতে পারবে। তবে মাথা ঢাকা যাবেনা । পায়ে ২ফিতার সেন্ডেল পরবে।       
  2. ইহরাম এর নিয়ত করা
    মীকাত থেকে নিমলিখিত কয়েক ধরণের মধ্যে থেকে যেকোনো একধরণের নিয়ত করতে হবে

উমরাহ যাত্রীগণ উমরাহ এর জন্য ইহরাম বাধবে অর্থাৎ নিয়ত করবে ।
লাব্বাইক উমরাতান (অর্থ: আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে ওমরার জন্য হাযির)
বিস্তারিত উমরাহ গাইড ( পুরুষ / মহিলা ) দেখতে এখানে ক্লিক করুন

  1. তালবিয়া পাঠ করা
    উচ্চস্বরে ( পুরুষ ), নিন্মস্বরে ( মহিলা ) তালবিয়া পাঠ করবে , তালবিয়া নিজে নিজে পাঠ করতে থাকবে দলবেঁধে তালবিয়া পাঠ করা সুন্নত সম্মত নয়।
    ইহরাম বাধা অর্থাৎ নিয়ত করার পরথেকেই তালবিয়া পাঠ শুরু করবে , শেষ করবে তাওয়াফ শুরু করার পূর্বক্ষণে। হজ এর তালবিয়া ১০ই জিলহজ বোরো জামারায় পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকবে।

মেয়েদের ইহরাম

মেয়েদের ইহরাম এর জন্য বিশেষ কোনো ড্রেস নেই , সম্পূর্ণ শরীর ঢিলাঢালা ভাবে আবৃত করে এমন যেকোনো রং এর সাধারণ শালীন পোশাক পরবে , তবে মুখমন্ডল এবং হাতের কব্জি খোলা থাকবে | নিকাব  হাতমোজা পরবেনা  |  মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষ থেকে পর্দা করার জন্য ওড়না জাতীয় কিছু ব্যবহার করবে | মহিলাগণ পায়ে মোজা পরতে পারবে .

হায়েযনেফাস অবস্থায় মেয়েরা পরিচ্ছন্ন হবে, গোসল করবে, ইহরাম বাধবে। কিন্তু হায়েয-নেফাস অবস্থায় নামায পড়বে না এবং কাবাঘর তাওয়াফ করবে না। বাকী অন্যসব কাজ করবে। এরপর যখন পবিত্র হবে তখন অজু-গোসল করে তাওয়াফ ও সাঈ করবে। যদি ইহরামের পর হায়েয শুরু হয় তখনো কাবা তাওয়াফ করবে না যতক্ষণ পবিত্র না হয়।

 ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ

  • চুল, নখ কাটা , শরীর চুলকানোর সময় অজ্ঞাতসারে চুল / পশম পরে গেলে ক্ষতি নেই , তবে সাবধান থাকা ভালো।
  • কাপড়ে বা শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা ।
  • ইহরামের কাপড় ( পুরুষ ) মাথায় লেগে থাকে এমন কিছু পড়া , যেমন টুপি, পাগড়ি , ইত্যাদি ।
  • ইহরাম অবস্থায় ( পুরুষ ) পুরু শরীরে বা আংশিক ভাবে সেলাই করা কাপড় পরিধান করা ।
  • স্বামী-স্ত্রী শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো বা এ সংক্রান্ত কিছু করা ।
  • বিয়ের প্রস্তাব দেয়া ( মুহরিম অবস্থায় বিয়ে করা যাবে না ). ।
  • ইহরাম অবস্থায় মহিলারা হাতমোজা পরবেনা, নেকাব দিয়া চেহারা ঢাকবে না ।
  • মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষ থেকে পর্দা করার জন্য ওড়না জাতীয় কিছু ব্যবহার করবে ।
  • কোনো প্রাণী শিকারের উদ্দেশে ধাওয়া করা / শিকার করা ।
  • ইহরাম অবস্থায় অথবা অন্য সময় , হারাম এরিয়াতে গাছের পাতা / ডাল ভাঙা ।
  • কটুকথা বলা , ঝগড়াঝাটি করা , কাওকে কষ্ট দেওয়া।

ইহরাম অবস্থায় যা করা বৈধ

  1. শুধু পানি বা সুগন্ধ বিহীন সাবান দিয়ে মাথা ও শরীর ধোয়া যাবে ।
  2. ক্ষত স্থানে বেন্ডেজ লাগানো যাবে ।
  3. চশমা , ঘড়ি , বেল্ট, সেফটিপিন , ইয়ারফোন ব্যবহার করা যাবে ।
  4. সেন্ডেল, আংটি পড়া যাবে।
  5. মাথায় ছাতা ব্যবহার করা যাবে ।
  6. ইহরামের পোশাক পরিবর্তন এবং পরিষ্কার করা যাবে ।
  7. স্বপ্নদোষ হলে ইহরামের কোন ক্ষতি হয় না।
  8. মহিলাগণ সেলাইযুক্ত কাপড় এমনকি অলংকারও পরতে পারবে

মানুষের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত প্রাণী মারা যাবে